রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫ জুন, ২০২৪, ০৭:৩৬ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

উপজেলা নির্বাচন

শেষ ধাপে আজ ৬০ উপজেলায় ভোট

ছবি সংগৃহীত

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বুধবার।

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশের ৬০টি উপজেলায় বিরতিহীনভাবে চলবে এ ভোটগ্রহণ। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাতেই দুর্গম এলাকার ১৯৭টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠিয়েছে কমিশন।

আজ ভোরে বাকী কেন্দ্রগুলোতে এসব সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। পূর্বের ধাপগুলোর মতো এধাপে কম ভোট পড়তে পারে। একইসঙ্গে সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের আশঙ্কাও রয়েছে।

ইসির তথ্য মতে, চতুর্থ ধাপের ভোটের মধ্য দিয়েই ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হচ্ছে। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারনে স্থগিতকৃত ২০টি উপজেলায় আগামী ৯ জুন ভোটগ্রহণ করা হবে। ফলে
ওইদিনই উপজেলা নির্বাচন চূড়ান্তভাবে সমাপ্ত হবে।


চতুর্থ ধাপে ৬০টি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫১জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৫জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০৫জনসহ মোট ৭২১জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৮টি পৌরসভা ও ৮৭৪টি ইউনিয়নের ২ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৫জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ইতিমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শেষ করেছেন। এখন জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ চলছে।

নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭ হাজার ৮২৫টি। নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট বিজিবি মোতায়েন থাকছে ১৬৬ প্লাটুন। ভোটকেন্দ্রে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ১৯ হাজার ৪৭৮ জন, মোবাইল টিমে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৬ হাজার ৩ জন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ২ হাজার ৬৭৩ জন। সর্বমোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৪১ হাজার ৩৭৯ জন।

মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট র‌্যাব মোতায়েন থাকবে ১৫৪টি টিম। ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট আনসার সদস্য মোতায়ন থাকবে ৬৭ হাজার ৭০৭ জন। নির্বাচনে স্বাভাবিক এলাকার ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদারসহ মোট ১৭ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বিশেষ এলাকার (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২১ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

ইতিমধ্যেই তপশিল ঘোষণার পরদিন থেকে ভোটগ্রহণের তিন দিন পূর্ব পর্যন্ত আচরণবিধি এবং আইনশৃঙ্গলা রক্ষায় প্রতি উপজেলার জন্য একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোটগ্রহণের তিন দিন পূর্ব থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতি ৩টি ইউনিয়নের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ১৭টি উপজেলায় অতিরিক্ত ২৯ প্লাটুন বিজিবি, ১৪টিম র‌্যাব, ১২৮জন আনসার ও ১৬জন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোট (নির্দিষ্ট রুটে চলাচলকারী ব্যতীত) অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি।

তাছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় ভোটগ্রহণের দুদিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে সব বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটা সমন্বয় সেল গঠন করা হয়েছে।

নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ ৯৯৯ এর মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি অভিযোগ আসার পর কারা তা দেখবে, তাও ট্র্যাকিং করা হবে।

দেশের ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার। প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে গত ৮ মে। 

এসব উপজেলায় গড়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ ভোট পড়ে। প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পার হন ২২ জন। ২১ মে এ ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৮ শতাংশ। ২৯ মে তৃতীয় ধাপের ৮৭টি উপজেলার নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

প্রথম ধাপের রেকর্ড সংখ্যক কম ভোটের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। এর পেছনে কৃষকদের ধানকাটা ও বৃষ্টিসহ পাঁচটি কারণকে দায়ি করে পরে ধাপে বোটার উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে আশাবাদী ছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পরের ধাপেও কাঙ্খিত ভোটার উপস্থিতি না হওয়ায় সরকারবিরোধী বিএনপির বর্জনকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে বিএনপির অল্প কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে
লড়লেও দলটি উপজেলা পরিষদের ভোট বর্জন করেছে।

মন্তব্য করুন